বিডিনিউজ ১০ ডেস্ক: দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি ‘কাজের বিনিময়ে টাকা’ (কাবিটা) ও ‘টেস্ট রিলিফের’ (টিআর) বিশেষ বরাদ্দের টাকায় এবার গৃহহীনদের ঘর তৈরি করে দেবে সরকার। জমি আছে কিন্তু ঘর নেই, বিধবা, পরিবারে উপার্জনক্ষম পুরুষ নেই অথবা যাদের বয়স ৬৫ বছরের ওপরে- এমন হতদরিদ্র পরিবারকে এ সুবিধা দেয়া হবে।
দুই কক্ষবিশিষ্ট প্রতিটি ঘরে থাকবে গরম, ঠাণ্ডা ও অগ্নিপ্রতিরোধক বিশেষ ব্যবস্থা। রান্নাঘর ও টয়লেট সুবিধাসহ প্রতিটি ঘর তৈরিতে প্রাথমিক ব্যয় তিন লাখ টাকা ধরা হয়েছে। টিআর ও কাবিটার অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে সরকার এ নতুন উদ্যোগ নিয়েছে।
সূত্র জানায়, টিআর ও কাবিটায় বিশেষ বরাদ্দের বেশির ভাগ টাকা লুটপাট হওয়ার অভিযোগ ওঠায় সরকার এবার বিশেষ বরাদ্দ ভিন্নভাবে ব্যবহার করতে চাইছে। টিআর ও কাবিটা তহবিল থেকে মূলত সংসদ সদস্যদের বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়। এর বাইরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পেশার সীমিতসংখ্যক মানুষকে বিশেষ বরাদ্দ দেয়। কিন্তু যে কাজের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয় সেই কাজের বেশির ভাগই ভুয়া হয়।
ঘর তৈরি করা প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান নিজ দফতরে বলেন, এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
এ কারণে এসব ঘরের ডিজাইন শহরের বাড়ি-ঘরের আদলে তৈরি করা হবে। এসব ঘরের নকশা তৈরির কাজ চলছে। দু’কক্ষবিশিষ্ট এ ঘরে থাকবে গরম, ঠাণ্ডা ও অগ্নিপ্রতিরোধক বিশেষ ব্যবস্থা। রান্নাঘর ও টয়লেট সুবিধার এ বিশেষ ঘরের প্রাথমিক ব্যয় তিন লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এ বছরের ৩০ জুনের মধ্যে ৩২ হাজার ঘর এবং ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ৩২ হাজার ঘর তৈরি করা হবে। প্রতিটি ঘর তৈরিতে তিন লাখ টাকা ব্যয় হবে। প্রথম এক বছরে এ খাতে ব্যয় হবে ২০৮ কোটি টাকা।
প্রতিমন্ত্রী এনামুর আরও বলেন, এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হাউস বিল্ডিং রিচার্জ ইন্সটিটিউটসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন। তারা ২৭ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মূলত টিআর ও কাবিটার বিশেষ বরাদ্দের অনিয়ম বন্ধ করার জন্য ঘর তৈরি করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড সদস্যরা সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরি করবেন। সেই তালিকা যাচাই-বাছাই করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। জেলা প্রশাসকের (ডিসি) নেতৃত্ব জেলা পর্যায়ের একটি কমিটি পুরো কাজের তদারকি করবেন। স্যান্ডউইচ প্যানেল আদলে ঘর নির্মাণ করা হবে। এ কারণে ঘরটি হবে শীত, গরম ও আগুন প্রতিরোধক।
এসব ঘর নির্মাণের টাকা আসবে বিভিন্ন কর্মসূচির উদ্বৃত্ত অর্থ থেকে। বিশেষ বরাদ্দের পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের ইজিপিপির টাকায় ঘরের ভিটি উঁচু করা হবে। ঘরের চালার জন্য ব্যবহৃত হবে ত্রাণের টিন। প্রয়োজনে এসব কর্মসূচির বেঁচে যাওয়া টাকাও খরচ করা হবে এ কর্মসূচিতে। এছাড়া তাঁবু কেনা, শুকনো খাবার বাবদ বরাদ্দের অর্থও প্রয়োজনে ব্যবহার হবে এ কর্মসূচিতে। কারণ এ মুহূর্তে সরকারের কাছে তাঁবু ও শুকনো খাবার যে পরিমাণে রয়েছে তা আগামী দুই অর্থবছরেও সংকট হবে না।
এ কর্মসূচির বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল নিজ দফতরে বলেন, টিআর-কাবিটার বিশেষ বরাদ্দের টাকায় হতদরিদ্রদের জন্য ঘর তৈরি করে দেবে সরকার। এর ফলে এ খাতের বিশেষ বরাদ্দের টাকায় যে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া যাবে। যেসব ভূমি মালিকের ঘর তৈরি করার সামর্থ্য নেই বিশেষ বরাদ্দের টাকায় তাদের ঘর করে দেয়া হবে। ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের ঘর তৈরি করে দেয়া হবে। নারীপ্রধান পরিবারের সদস্যরা এ ঘর পাবেন।
ঘর দেয়ার এ কর্মসূচির চ্যালেঞ্জ কি- জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (ত্রাণ) জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, মূল চ্যালেঞ্জ সুবিধাভোগী বাছাই করা। ১০ টাকা কেজিদরে চাল খাওয়াতে গিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় বিড়ম্বনায় পড়েছিল। চাল পাওয়ার কথা ছিল হতদরিদ্রদের। কিন্তু কর্মসূচির প্রথম দফার চাল চলে গিয়েছিল বিত্তশালীদের কব্জায়। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে তালিকা সংশোধন করে ১০ টাকা কেজিদরের চাল বিতরণ করা হয়েছে।
চালের মতো বিশেষ বরাদ্দের টাকায় ঘর করে দেয়ার উপকারভোগীদের চিহ্নিত করার কাজটিও ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া উপকরণ পৌঁছানো আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ ঘরটি তৈরি হবে বিশেষ উপকরণ দিয়ে। এসব উপকরণ পৌঁছানোও একটি চ্যালেঞ্জ। দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় এর সুবিধাভোগীদের তদারকিও একটি চ্যালেঞ্জ বলে তারা মনে করেন।
প্রথম দফায় কোন এলাকায় ঘর তৈরি করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে জাকির হোসেন বলেন, দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হবে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ ক্যাটাগরি জেলার তালিকা রয়েছে। সেই তালিকা ধরে মূলত কর্মসূচির স্থান নির্বাচন করা হবে।